ইসলামের শরয়ী বিধান শিক্ষাদান ও প্রচার-প্রসারে মা আয়েশা সিদ্দীকার অবদান।

ইসলামী শরীয়তের বিধানসমূহের পূর্ণাঙ্গতা আনয়ন ও অলংকার সমৃদ্ধ করার জন্য রাসূল ﷺ এর সঙ্গে এমন একজন সহধর্মিনী আবশ্যকীয় ছিলেন যিনি হবেন মেধাবী,বিচক্ষণ, বিজ্ঞ ও মুত্তাকী। উপরন্তু নূর নবিজী ﷺ এর ইন্তেকালের পরেও দীর্ঘদিন হায়াত পায় এমন সাধবী মহীয়সী রমণী। 

আল্লাহ পাক ইসলামের এই প্রয়োজনীয়তাকে পরিপূর্ণ করলেন উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহা কে দিয়ে। সুতরাং নুর নবীজি ﷺ এর সাথে মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহা এর এই বরকতময় বিবাহটা ছিলেন ইসলামী শরীয়তের জন্য সোনায় সোহাগা। ইহা সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মোট 11 টি বিবাহ করেছিলেন। যাহা অন্য কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় ।রাসূল ﷺ এর এই অনেক বিবাহের বৈধতা প্রমাণ করে যে তিনি আমাদের মত মানুষ নন। তাছাড়াও নুর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বহুবিবাহ ইসলামের জন্য সীমাহীন উপকার সাধিত হয়েছিল। যা এখানে উল্লেখ করলাম না। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সঙ্গে মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহার বিবাহ হওয়ার কারণে এবং বিবাহকালীন মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহার বয়স কম হওয়ার কারণে ইসলামের শরয়ী বিধানে অসংখ্য উপকার সাধিত হয়েছে যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তার মধ্যে শুধু একটি ধারা আলোচনা করা হল:

✿ তাদের এই বরকতময় বিবাহ কালীন উভয়ের বয়সের মধ্যে অনেক তারতম্য ছিলেন যেহেতু মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা  বয়সে অনেক ছোট সেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর (দুনিয়াবী গতানুগতিক ধারায়) মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার কথা। ফলপ্রসূতে তা-ই হয়েছিল। সরকারে দো আলম পৃথিবীর থেকে বিদায় নেওয়ার পর ইসলামের হুকুম আহকাম শিক্ষা প্রদান ও প্রচার-প্রসারের জন্য বিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিবিশেষের দরকার হয়ে পড়ে। ওই সমস্ত প্রয়োজনীয় বিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য জলিলে কদর সাহাবীদের মধ্যে মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা ছিলেন সকলের শীর্ষে।মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন একাধারে মেধাবী, বিচক্ষণ, মুত্তাকী ও বিজ্ঞসহ বহু গুণে গুণান্বিত অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। উপরন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলাম এর ইন্তেকালের পর তিনি দীর্ঘদিন বেঁচে রয়েছিলেন। ফলে তার দ্বারা ইসলামের হুকুম আহকাম সুদীর্ঘকাল প্রচার প্রসার লাভ করেছিল। এমনকি তাঁর মত মেধাবী মহিলা হুজুর সাল্লাল্লাহু সালামের জীবনসঙ্গিনী না থাকলে শরীয়তের অনেক মাসআলা গোপন থাকতো বললে অত্যুক্তি হবে না। উল্লেখ্য বড় বড় সাহাবাগণ বলতেন (পার্থিব কিংবা শরীয়তের বিধানের) কোন বিষয়ে আমাদের সন্দেহ হলে আমরা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহার নিকট গিয়ে জানতে পারতাম। অপরদিকে ইসলামী শরীয়তের নির্দেশনাবলী তথা সীরাতে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তায় হাদিস সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়।তখন জলিলে কদর মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ অতুলনীয় ও অক্লান্ত পরিশ্রম এবং প্রাণপণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে হাদিস শরীফ সংগ্রহ করেন। এই লক্ষ লক্ষ হাদিস শরীফ রেওয়ায়াত করার জন্য ব্যক্তিত্ববান ও নির্ভরযোগ্য মেধাবী লোকের প্রয়োজন ছিল। এই সুমহান দায়িত্ব পালনে যে সমস্ত রাবিয়ীনে কেরাম হাদিস শরীফ রেওয়ায়েত করেন তাদের মধ্যে মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন প্রাঞ্জলতা ও নির্ভরশীলতায় সকলের শীর্ষে। যাঁর বর্ণনাকৃত হাদিসের সংখ্যা ২২১০টি। তদুপরি সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন মহিলাদের মধ্যে প্রথম। এই কথা অকপটে মেনে নিতে হবে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাহার সাধী মোবারক সংঘটিত হওয়ার সময়কালীন মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহার বয়স উল্লেখযোগ্য হারে কম হওয়ার কারণে নূর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর ইন্তেকালের পর তিনি দীর্ঘকাল হায়াত পেয়েছিলেন। ফলে সুদীর্ঘকাল যাবত ইসলামী শরীয়তের খেদমত করিবার সুযোগ হয়েছিল। যার ফলে ইসলামী শরীয়ত হয়েছে যুগান্তকারী, টেকসই ও অলংকার সমৃদ্ধ।


মাষ্টার হামিদুর রহমান সিকদার 

বাঁশখালী পৌরসভা চট্টগ্রাম।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রসঙ্গ: আল্লাহর রাসূল ﷺ সামনে যেভাবে দেখতেন পিছনেও তেমনি দেখতেন।

শিয়াবাদের মুখোশ উন্মোচন -(১)

মাসলাকে আ'লা হযরতের বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান: